ভগ্নহৃদয় দ্বাবিংশ সর্গ bhagno hriday dabingso sorgo [ কবিতা ]
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ : ভগ্নহৃদয়
কবিতার শিরোনামঃ ভগ্নহৃদয় দ্বাবিংশ সর্গ
ভগ্নহৃদয় দ্বাবিংশ সর্গ bhagno hriday dabingso sorgo [ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নলিনীর প্রতি বিনোদের গান
তুই রে বসন্ত সমীরণ,
তোর নহে সুখের জীবন
কিবা দিবা কিবা রাতি পরিমলমদে মাতি
কাননে করিস বিচরণ–
নদীরে জাগায়ে দিস লতারে রাগায়ে দিস
চুপিচুপি করিয়া চুম্বন!
তোর নহে সুখের জীবন!
যেথা দিয়া তুই যাস পদতলে চারি পাশ
ফুলেরা খুলিয়া দেয় প্রাণ!
বুকের উপর দিয়া যাস তুই মাড়াইয়া,
কিছু না করিস অবধান।
শুনিতে মুখের কথা আকুল হইয়া লতা
কত তোরে সাধাসাধি করে–
দুটা কথা শুনিলি বা,দুটি কথা বলিলি বা,
চলে যাস দূর দূরান্তরে!
পাখীরা খুলিয়া প্রাণ করে তোর গুণগান,
চারি দিকে উঠে প্রতিধ্বনিঃ
বকুলের বালিকারা হইয়া আপনা-হারা
ঝরি পড়ে সুখেতে অমনি!
তবু রে বসন্ত সমীরণ,
তোর নহে সুখের জীবন!
আছে যশ, আছে মান, আছে শত মন প্রাণ–
শুধু এ সংসারে তোর নাই
এক তিল দাঁড়াবার ঠাঁই!
তাই রে জোছনারাতে অথবা বসন্তপ্রাতে
গাস যবে উল্লাসের গান,
সে রাগিণী মনোমাঝে বিষাদের সুরে বাজে,
হাহাকার করে তাহে প্রাণ!
শোন্ বলি বসন্তের বায়,
হৃদয়ের লতাকুঞ্জে আয়–
শ্যামল বাহুর ডোরে বাঁধিয়া রাখিব তোরে
ছোট সেই কুঞ্জটির ছায়!
তুই সেথা র’স যদি তবে সেথা নিরবধি
মধুর বসন্ত জেগে রবে,
প্রতি দিন শত শত নব নব ফুল যত
ফুটিবেক, তোরি সহ হবে।
তোরি নাম ডাকি ডাকি একটি গাহিবে পাখী,
বাহিরে যাবে না তার স্বর!
সে কুঞ্জেতে অতি মৃদু মাণিক ফুটাবে শুধু
বাহিরের মধ্যাহ্নের কর।
নিভৃত নিকুঞ্জছায় হেলিয়া ফুলের গায়
শুনিয়া পাখীর মৃদু গান
লতার-হৃদয়ে-হারা সুখে-অচেতন-পারা
ঘুমায়ে কাটায়ে দিবি প্রাণ!
তাই বলি, বসন্তের বায়,
হৃদয়ের লতাকুঞ্জে আয়!
অতৃপ্ত মনের আশ লুটিয়া সুখের রাশ,
কেন রে করিস্ হায় হায়!
আরও পড়ুনঃ