মাটি কবিতা | Mati Kobita | বীথিকা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । বীথিকা হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি বাংলা কাব্যগ্রন্থ। এটি ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয়। এটি রবীন্দ্রনাথের কাব্য রচনার “অন্ত্যপর্ব”-এর অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।
কাব্যগ্রন্থের নামঃ বীথিকা
কবিতার নামঃ ম’টি
মাটি কবিতা | Mati Kobita | বীথিকা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বাঁখারির বেড়া দেওয়া ভূমি; হেথা করি ঘোরাফেরা
সারাক্ষণ আমি-দিয়ে ঘেরা
বর্তমানে।
মন জানে
এ মা’টি আমারি,
যেমন এ শালতরুসারি
বাঁধে নিজ তলবীথি শিকড়ের গভীর বিস্তারে
দূর শতাব্দীর অধিকারে।
হেথা কৃষ্ণচূড়াশাখে ঝরে শ্রাবণের বারি
সে যেন আমারি–
ভোরে ঘুমভাঙা আলো, রাত্রে তারাজ্বলা অন্ধকার,
যেন সে আমারি আপনার
এ মা’টির সীমাটুকু মাঝে।
আমার সকল খেলা, সব কাজে,
এ ভূমি জড়িত আছে শাশ্বতের যেন সে লিখন।
হঠাৎ চমক ভাঙে নিশীথে যখন
সপ্তর্ষির চিরন্তন দৃষ্টিতলে,
ধ্যানে দেখি, কালের যাত্রীর দল চলে
যুগে যুগান্তরে।
এই ভূমিখণ্ড-‘পরে
তারা এল, তারা গেল কত।
তারাও আমারি মতো
এ মা’টি নিয়েছে ঘেরি–
জেনেছিল, একান্ত এ তাহাদেরি।
কেহ আর্য কেহ বা অনার্য তারা,
কত জাতি নামহীন, ইতিহাসহারা।
কেহ হোমাগ্নিতে হেথা দিয়েছিল হবির অঞ্জলি,
কেহ বা দিয়েছে নরবলি।
এ মা’টিতে একদিন যাহাদের সুপ্তচোখে
জাগরণ এনেছিল অরুণ-আলোকে
বিলুপ্ত তাদের ভাষা।
পরে পরে যারা বেঁধেছিল বাসা,
সুখে দুঃখে জীবনের রসধারা
মা’টির পাত্রের মতো প্রতি ক্ষণে ভরেছিল যারা
এ ভূমিতে,
এরে তারা পারিল না কোনো চিহ্ন দিতে।
আসে যায়
ঋতুর পর্যায়,
আবর্তিত অন্তহীন
রাত্রি আর দিন;
মেঘরৌদ্র এর ‘পরে
ছায়ার খেলেনা নিয়ে খেলা করে
আদিকাল হতে।
কালস্রোতে
আগন্তুক এসেছি হেথায়
সত্য কিম্বা দ্বাপরে ত্রেতায়
যেখানে পড়ে নি লেখা
রাজকীয় স্বাক্ষরের একটিও স্থায়ী রেখা।
হায় আমি,
হায় রে ভূস্বামী,
এখানে তুলিছ বেড়া–উপাড়িছ হেথা যেই তৃণ
এই মাটিতে সে-ই রবে লীন
পুনঃ পুনঃ বৎসরে বৎসরে। তারপরে!–
এই ধূলি রবে পড়ি আমি-শূন্য চিরকাল-তরে।
আরও দেখুনঃ
- পাবনায় বাড়ি হবে pabnay bari hobe [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- স্বপ্ন হঠাৎ উঠল রাতে swopno hothat uthlo rate [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- হাজারিবাগের ঝোপে হাজারটা হাই hajaribager hate hajarta hai [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- নাম তার চিনুলাল nam tar chinulal [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- বশীরহাটেতে বাড়ি boshirhatete bari [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর