যখন দেখা হল
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ : শেষ সপ্তক [ ১৯৩৫ ]
কবিতার শিরনামঃ যখন দেখা হল
![যখন দেখা হল jokhon dekha holo [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 2 যখন দেখা হল jokhon dekha holo [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-9-2.jpg)
যখন দেখা হল jokhon dekha holo [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
যখন দেখা হল
তার সঙ্গে চোখে চোখে
তখন আমার প্রথম বয়েস;
সে আমাকে শুধাল,
“তুমি খুঁজে বেড়াও কাকে?”
আমি বললেম,
“বিশ্বকবি তাঁর অসীম ছড়াটা থেকে
একটা পদ ছিঁড়ে নিলেন কোন্ কৌতুকে,
ভাসিয়ে দিলেন
পৃথিবীর হাওয়ার স্রোতে,
যেখানে ভেসে বেড়ায়
ফুলের থেকে গন্ধ,
বাঁশির থেকে ধ্বনি।
ফিরছে সে মিলের পদটি পাবে ব’লে;
তার মৌমাছির পাখায় বাজে
খুঁজে বেড়াবার নীরব গুঞ্জরণ।”
শুনে সে রইল চুপ করে
অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে।
আমার মনে লাগল ব্যথা,
বললেম, “কী ভাবছ তুমি?”
ফুলের পাপড়ি ছিঁড়তে ছিঁড়তে সে বললে,–
“কেমন করে জানবে তাকে পেলে কিনা,
তোমার সেই অসংখ্যের মধ্যে একটিমাত্রকে।”
![যখন দেখা হল jokhon dekha holo [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 3 দুই বোন dui bon [ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-18-2.jpg)
আমি বললেম,
“আমি যে খুঁজে বেড়াই
সে তো আমার ছিন্ন জীবনের
সবচেয়ে গোপন কথা;
ও-কথা হঠাৎ আপনি ধরা পড়ে
যার আপন বেদনায়,
আমি জানি
আমার গোপন মিল আছে তারি ভিতর।”
কোনো কথা সে বলল না।
কচি শ্যামল তার রঙটি;
গলায় সরু সোনার হারগাছি,
শরতের মেঘে লেগেছে
ক্ষীণ রোদের রেখা।
চোখে ছিল
একটা দিশাহারা ভয়ের চমক
পাছে কেউ পালায় তাকে না ব’লে।
তার দুটি পায়ে ছিল দ্বিধা,
ঠাহর পায়নি
কোন্খানে সীমা
তার আঙিনাতে।
দেখা হল।
সংসারে আনাগোনার পথের পাশে
আমার প্রতীক্ষা ঐটুকু নিয়ে।
তার পরে সে চলে গেছে।
আরও দেখুনঃ
- আমার প্রিয়ার ছায়া [ Amar Priyar Chhaya ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- কিছু বলব বলে এসেছিলেম [ Kichu Bolbo Bole Eshechilam ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- আজি বরিষন মুখরিত [ Aji Borishono Mukhorito ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- মনে হল যেন [ Mone Holo Jeno ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- আঁধার অম্বরে প্রচণ্ড [ Adhar Ambare Prachanda ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)