‘উপহার’ কবিতাটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থ ‘মানসী’ থেকে নেওয়া হয়েছে। মানসী কাব্যগ্রন্থটি ১৮৯০ সালে প্রকাশিত হয় এবং এটি রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাধার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করে। এই গ্রন্থে কবি তার কাব্যিক পরিপক্বতার নিদর্শন দেন এবং ভাবনার গভীরতা ও শিল্পসুষমায় অনন্য উচ্চতায় পৌঁছান। উপহার কবিতায় ভালোবাসা, আত্মনিবেদন ও মানবিক আবেগের এক চিরন্তন প্রকাশ ঘটে। এই কবিতার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ গভীর প্রেমবোধ এবং আত্মত্যাগের ভাবনা এক পরিশীলিত কাব্যভাষায় প্রকাশ করেছেন, যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ‘উপহার’ কেবল একটি প্রেমের কবিতাই নয়, এটি সম্পর্কের মর্মবোধ, হৃদয়বিনিময় এবং গভীর আত্মসম্পর্কের এক চিরকালীন প্রতিচ্ছবি।
উপহার কবিতা [ মানসী কাব্যগ্রন্থ ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নিভৃত এ চিত্তমাঝে নিমেষে নিমেষে বাজে
জগতের তরঙ্গ-আঘাত,
ধ্বনিত হৃদয়ে তাই মুহূর্ত বিরাম নাই
নিদ্রাহীন সারা দিন রাত।
সুখ দুঃখ গীতস্বর ফুটিতেছে নিরন্তর–
ধ্বনি শুধু, সাথে নাই ভাষা।
বিচিত্র সে কলরোলে ব্যাকুল করিয়া তোলে
জাগাইয়া বিচিত্র দুরাশা।
এ চিরজীবন তাই আর কিছু কাজ নাই
রচি শুধু অসীমের সীমা।
আশা দিয়ে, ভাষা দিয়ে, তাহে ভালোবাসা দিয়ে
গড়ে তুলি মানসী-প্রতিমা।
বাহিরে পাঠায় বিশ্ব কত গন্ধ গান দৃশ্য
সঙ্গীহারা সৌন্দর্যের বেশে,
বিরহী সে ঘুরে ঘুরে ব্যথাভরা কত সুরে
কাঁদে হৃদয়ের দ্বারে এসে।
সেই মোহমন্ত্র-গানে কবির গভীর প্রাণে
জেগে ওঠে বিরহী ভাবনা,
ছাড়ি অন্তঃপুরবাসে সলজ্জ চরণে আসে
মূর্তিমতী মর্মের কামনা।
অন্তরে বাহিরে সেই ব্যাকুলিত মিলনেই
কবির একান্ত সুখোচ্ছ্বাস।
সেই আনন্দমুহূর্তগুলি তব করে দিনু তুলি
সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণের প্রকাশ।
আরও দেখুনঃ