জন্মদিন কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ : পরিশেষ [ ১৯৩২ ]
কবিতার শিরোনামঃ জন্মদিন
জন্মদিন কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবিপ্রদক্ষিণপথে জন্মদিবসের আবর্তন
হয়ে আসে সমাপন।
আমার রুদ্রের
মালা রুদ্রাক্ষের
অন্তিম গ্রন্থিতে এসে ঠেকে
রৌদ্রদগ্ধ দিনগুলি গেঁথে একে একে।
হে তপস্বী, প্রসারিত করো তব পাণি
লহো মালাখানি।
উগ্র তব তপের আসন,
সেথায় তোমারে সম্ভাষণ
করেছিনু দিনে দিনে কঠিন স্তবনে,
কখনো মধ্যাহ্নরৌদ্রে কখনো-বা ঝঞ্ঝার পবনে।
এবার তপস্যা হতে নেমে এসো তুমি–
দেখা দাও যেথা তব বনভূমি
ছায়াঘন, যেথা তব আকাশ অরুণ
আষাঢ়ের আভাসে করুণ।
অপরাহ্ন যেথা তার ক্লান্ত অবকাশে
মেলে শূন্য আকাশে আকাশে
বিচিত্র বর্ণের মায়া; যেথা সন্ধ্যাতারা
বাক্যহারা
বাণীবহ্নি জ্বালি
নিভৃতে সাজায় ব’সে অনন্তের আরতির ডালি।
শ্যামল দাক্ষিণ্যে ভরা
সহজ আতিথ্যে বসুন্ধরা
যেথা স্নিগ্ধ শান্তিময়,
যেথা তার অফুরান মাধুর্যসঞ্চয়
প্রাণে প্রাণে
বিচিত্র বিলাস আনে রূপে রসে গানে।
বিশ্বের প্রাঙ্গণে আজি ছুটি হোক মোর,
ছিন্ন করে দাও কর্মডোর।
আমি আজ ফিরব কুড়ায়ে
উচ্ছৃঙ্খল সমীরণ যে কুসুম এনেছে উড়ায়ে
সহজে ধুলায়,
পাখির কুলায়
দিনে দিনে ভরি উঠে যে-সহজ গানে,
আলোকের ছোঁওয়া লেগে সবুজের তম্বুরার তানে।
এই বিশ্বসত্তার পরশ,
স্থলে জলে তলে তলে এই গূঢ় প্রাণের হরষ
তুলি লব অন্তরে অন্তরে–
সর্বদেহে, রক্তস্রোতে, চোখের দৃষ্টিতে, কণ্ঠস্বরে,
জাগরণে, ধেয়ানে, তন্দ্রায়,
বিরামসমুদ্রতটে জীবনের পরমসন্ধ্যায়।
এ জন্মের গোধূলির ধূসর প্রহরে
বিশ্বরসসরোবরে
শেষবার ভরিব হৃদয় মন দেহ
দূর করি সব কর্ম, সব তর্ক, সকল সন্দেহ,
সব খ্যাতি, সকল দুরাশা,
বলে যাব, “আমি যাই, রেখে যাই, মোর ভালোবাসা।’
আরও পড়ুনঃ
আলো যে আজ গান করে মোর alo je aj gan kore mor [ কবিতা ] – রবীন্দ্রনাথঠাকুর
অগ্নিবীণা বাজাও তুমি ognibina bajao tumi [ কবিতা ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চোখে দেখিস, প্রাণে কানা chokhe dekhis prane kana [ কবিতা ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর