দুই পাখী কবিতাটি [Dui pakhi kobita ] কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের অংশ।সমগ্র গ্রন্থটি বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোম্যান্টিক কাব্য সংকলন। এটি ১৮৯৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি রবীন্দ্রনাথের কাব্য রচনার “মানসী-সোনার তরী পর্ব”-এর অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।
কাব্যগ্রন্থের নামঃ সোনার তরী
কবিতার নামঃ দুই পাখী

দুই পাখী কবিতা । Dui pakhi kobita । সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দুই পাখি (dui pakhi)
খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে
বনের পাখি ছিল বনে।
একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে,
কী ছিল বিধাতার মনে।
বনের পাখি বলে, খাঁচার পাখি ভাই,
বনেতে যাই দোঁহে মিলে।
খাঁচার পাখি বলে– বনের পাখি, আয়
খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।’
বনের পাখি বলে– “না,
আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।’
খাঁচার পাখি বলে– “হায়,
আমি কেমনে বনে বাহিরিব!’
বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি
বনের গান ছিল যত,
খাঁচার পাখি পড়ে শিখানো বুলি তার–
দোঁহার ভাষা দুইমতো।
বনের পাখি বলে, খাঁচার পাখি ভাই,
বনের গান গাও দিখি।
খাঁচার পাখি বলে, বনের পাখি ভাই,
খাঁচার গান লহো শিখি।
বনের পাখি বলে– না,
আমি শিখানো গান নাহি চাই।’
খাঁচার পাখি বলে– “হায়,
আমি কেমনে বন-গান গাই।’
বনের পাখি বলে, “আকাশ ঘননীল,
কোথাও বাধা নাহি তার।’
খাঁচার পাখি বলে, “খাঁচাটি পরিপাটি
কেমন ঢাকা চারি ধার।’
বনের পাখি বলে, “আপনা ছাড়ি দাও
মেঘের মাঝে একেবারে।’
খাঁচার পাখি বলে, নিরালা সুখকোণে
বাঁধিয়া রাখো আপনারে!’
বনের পাখি বলে– “না,
সেথা কোথায় উড়িবারে পাই!’
খাঁচার পাখি বলে– “হায়,
মেঘে কোথায় বসিবার ঠাঁই!’
এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে
তবুও কাছে নাহি পায়।
খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে,
নীরবে চোখে চোখে চায়।
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে,
বুঝাতে নারে আপনায়।
দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা,
কাতরে কহে, “কাছে আয়!’
বনের পাখি বলে–না,
কবে খাঁচার রুধি দিবে দ্বার।
খাঁচার পাখি বলে–হায়,
মোর শকতি নাহি উড়িবার।
আরও পড়ুনঃ
- রূপকার কবিতা | rupokar kobita | বীথিকা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ক্ষণিক কবিতা | khonik kobita | বীথিকা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ঈষৎ দয়া কবিতা | ishot doya kobita | বীথিকা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- দানমহিমা কবিতা | danmohima kobita | বীথিকা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- প্রণতি কবিতা | pronoti kobita | বীথিকা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর