বাণীবিনিময়
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ : শিশু ভোলানাথ [ ১৯২২ ]
কবিতার শিরনামঃ বাণীবিনিময়
![বাণীবিনিময় bani binimoy [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 2 বাণীবিনিময় bani binimoy [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-19-1.jpg)
বাণীবিনিময় bani binimoy [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মা, যদি তুই আকাশ হতিস,
আমি চাঁপার গাছ,
তোর সাথে মোর বিনি-কথায়
হত কথার নাচ।
তোর হাওয়া মোর ডালে ডালে
কেবল থেকে থেকে
কত রকম নাচন দিয়ে
আমায় যেত ডেকে।
মা ব’লে তার সাড়া দেব
কথা কোথায় পাই,
পাতায় পাতায় সাড়া আমার
নেচে উঠত তাই।
তোর আলো মোর শিশির-ফোঁটায়
আমার কানে কানে
টলমলিয়ে কী বলত যে
ঝলমলানির গানে।
আমি তখন ফুটিয়ে দিতেম
আমার যত কুঁড়ি,
কথা কইতে গিয়ে তারা
নাচন দিত জুড়ি।
উড়ো মেঘের ছায়াটি তোর
কোথায় থেকে এসে
আমার ছায়ায় ঘনিয়ে উঠে’
কোথায় যেত ভেসে।
![বাণীবিনিময় bani binimoy [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 3 স্পর্ধা spordha [ কবিতা ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-12-1-300x158.jpg)
সেই হত তোর বাদল-বেলার
রূপকথাটির মতো;
রাজপুত্তুর ঘর ছেড়ে যায়
পেরিয়ে রাজ্য কত;
সেই আমারে বলে যেত
কোথায় আলেখ-লতা,
সাগরপারের দৈত্যপুরের
রাজকন্যার কথা;
দেখতে পেতেম দুয়োরানীর
চক্ষু ভর-ভর,
শিউরে উঠে পাতা আমার
কাঁপত থরথর।
হঠাৎ কখন বৃষ্টি তোমার
হাওয়ার পাছে পাছে
নামত আমার পাতায় পাতায়
টাপুর-টুপুর নাচে;
সেই হত তোর কাঁদন-সুরে
রামায়ণের পড়া,
সেই হত তোর গুনগুনিয়ে
শ্রাবণ-দিনের ছড়া।
মা, তুই হতিস নীলবরনী,
আমি সবুজ কাঁচা;
তোর হত, মা, আলোর হাসি,
আমার পাতার নাচা।
তোর হত, মা, উপর থেকে
নয়ন মেলে চাওয়া,
আমার হত আঁকুবাঁকু
হাত তুলে গান গাওয়া।
তোর হত, মা চিরকালের
তারার মণিমালা,
আমার হত দিনে দিনে
ফুল-ফোটাবার পালা।
আরও দেখুনঃ
- আমার প্রিয়ার ছায়া [ Amar Priyar Chhaya ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- কিছু বলব বলে এসেছিলেম [ Kichu Bolbo Bole Eshechilam ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- আজি বরিষন মুখরিত [ Aji Borishono Mukhorito ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- মনে হল যেন [ Mone Holo Jeno ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- আঁধার অম্বরে প্রচণ্ড [ Adhar Ambare Prachanda ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)