বিবাহের পঞ্চম বরষে (Bibaher Ponchom Boroshe) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষলেখা (১৯৪১) কাব্যগ্রন্থের একটি কাব্যিক প্রেমোৎসব। এখানে কবি বিবাহের পঞ্চম বছরে দাম্পত্য সম্পর্কের গভীরতা, পরিণত ভালোবাসা এবং শান্ত আনন্দের বর্ণনা দিয়েছেন। কবিতায় প্রথম যৌবনের উচ্ছ্বাস থেকে ধীর, সুগভীর মিলনের সৌন্দর্যের রূপান্তর ফুটে উঠেছে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শেষলেখা
কবিতার নাম: বিবাহের পঞ্চম বরষে
প্রকাশকাল: ১৯৪১
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: প্রেম, দাম্পত্য জীবন, সম্পর্কের পরিণতি
বিবাহের পঞ্চম বরষে – কবিতার পাঠ
বিবাহের পঞ্চম বরষে
যৌবনের নিবিড় পরশে
গোপন রহস্যভরে
পরিণত রসপুঞ্জ অন্তরে অন্তরে
পুষ্পের মঞ্জরী হতে ফলের স্তবকে
বৃন্ত হতে ত্বকে
সুবর্ণবিভায় ব্যাপ্ত করে।
সংবৃত সুমন্দ গন্ধ অতিথিরে ডেকে আনে ঘরে।
সংযত শোভায়
পথিকের নয়ন লোভায়।
পাঁচ বৎসরের ফুল্ল বসন্তের মাধবীমঞ্জরি
মিলনের স্বর্ণপাত্রে সুধা দিল ভরি;
মধু সঞ্চয়ের পর
মধুপেরে করিল মুখর।
শান্ত আনন্দের আমন্ত্রণে
আসন পাতিয়া দিল রবাহূত অনাহূত জনে।
বিবাহের প্রথম বৎসরে
দিকে দিগন্তরে
সাহানায় বেজেছিল বাঁশি,
উঠেছিল কল্লোলিত হাসি,
আজ স্মিতহাস্য ফুটে প্রভাতের মুখে
নিঃশব্দ কৌতুকে।
বাঁশি বাজে কানাড়ায় সুগভীর তানে
সপ্তর্ষির ধ্যানের আহ্বানে।
পাঁচ বৎসরের ফুল্ল বিকশিত সুখস্বপ্নখানি
সংসারের মাঝখানে পূর্ণতার স্বর্গ দিল আনি।
বসন্তপঞ্চম রাগ আরম্ভেতে উঠেছিল বাজি,
সুরে সুরে তালে তালে পূর্ণ হয়ে উঠিয়াছে আজি।
পুষ্পিত অরণ্যতলে প্রতি পদক্ষেপে
মঞ্জীরে বসন্তরাগ উঠিতেছে কেঁপে।
ভাবার্থ
কবিতায় বিবাহিত জীবনের পঞ্চম বছরে দাম্পত্য ভালোবাসার রূপান্তর ফুটে উঠেছে। প্রথম বছরের উচ্ছ্বসিত আনন্দ, হাসি ও বাঁশির সুর ধীরে ধীরে রূপ নিয়েছে সংযত, গভীর ও শান্ত সুখে। কবি ফুল থেকে ফলে, উচ্ছ্বাস থেকে প্রশান্তিতে, মিলনের পরিণত স্বাদে জীবনকে সমৃদ্ধ দেখতে পান। এটি এক পরিণত প্রেমের গাথা, যেখানে আবেগ ও সৌন্দর্যের মেলবন্ধন ঘটেছে।
শব্দার্থ
সুবর্ণবিভা: সোনালি আভা।
সংবৃত: আবৃত, আড়ালে রাখা।
মাধবীমঞ্জরি: মাধবী লতার ফুলের গুচ্ছ।
সপ্তর্ষি: আকাশের সপ্তর্ষিমণ্ডল।
বসন্তপঞ্চম রাগ: এক প্রকার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ, যা বসন্তের আনন্দ প্রকাশ করে।