বিসর্জন কবিতা | প্রভাত সংগীত কাব্যগ্রন্থ | Bisorjon Kobita

“বিসর্জন” কবিতা (Bisorjon Kobita) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাত সংগীত কাব্যগ্রন্থের একটি আবেগময় রচনা। কবিতাটিতে বিদায়ের বেদনাকে গভীর স্নেহ ও আশীর্বাদের আবহে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রিয়জনকে অন্য পরিবারের কাছে সমর্পণ করার মুহূর্তে কবির অন্তর্দ্বন্দ্ব, স্নেহের বাঁধন ও শুভকামনা—সব মিলিয়ে এক হৃদয়স্পর্শী চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। বিসর্জন কেবল শারীরিক বিদায় নয়, বরং আবেগ, স্মৃতি এবং আশার এক মিলিত স্রোত, যা পাঠকের মনে দীর্ঘস্থায়ী অনুরণন সৃষ্টি করে।

কবিতার মৌলিক তথ্য

  • কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  • কাব্যগ্রন্থ: প্রভাত সংগীত

  • কবিতার নাম: বিসর্জন

  • প্রকাশকাল: অজানা (প্রভাত সংগীত প্রকাশকাল—১৮৮৩)

  • বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: বিদায়, পারিবারিক স্নেহ, আশীর্বাদ, আবেগময় সম্পর্ক

 

 

বিসর্জন কবিতার পাঠ

যে তোরে বাসেরে ভাল, তারে ভালবেসে বাছা,
চিরকাল মুখে তুই রোস।
বিদায়। মোদের ঘরে রতন আছিলি তুই,
এখন তাহারি তুই হোস।
আমাদের আশীর্বাদ নিয়ে তুই যারে
এক পরিবার হতে অন্য পরিবারে।
সুখ শান্তি নিয়ে যাস তোর পাছে পাছে,
দুঃখ জ্বালা রেখে যাস আমাদের কাছে।

হেথা রাখিতেছি ধরে, সেথা চাহিতেছে তোরে,
দেরি হোলো, যা তাদের কাছে।
প্রাণের বাছাটি মোর, লক্ষ্মীর প্রতিমা তুই,
দুইটি কর্তব্য তোর আছে।
একটু বিলাপ যাস আমাদের দিয়ে,
তাহাদের তরে আশা যাস সাথে নিয়ে;
এক বিন্দু অশ্রু দিস আমাদের তরে,
হাসিটি লইয়া যাস তাহাদের ঘরে।

 

ভাবার্থ

এই কবিতায় কবি প্রিয়জনকে বিদায় জানাচ্ছেন গভীর মমতায়। প্রিয়জনকে আশীর্বাদ দিয়ে নতুন জীবনের পথে পাঠানো হয়েছে—যেখানে সুখ ও শান্তি কামনা করা হয়েছে তার জন্য। একইসাথে, পুরনো ঘরে কিছু স্মৃতি, ভালোবাসা ও আবেগ রেখে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কবি এখানে পারিবারিক বন্ধন, নতুন দায়িত্ব গ্রহণ এবং স্নেহময় বিদায়ের আবেগ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

শব্দার্থ

  • রতন: অমূল্য ধন বা মূল্যবান ব্যক্তি

  • আশীর্বাদ: মঙ্গলকামনা বা শুভকামনা

  • বিলাপ: দুঃখের প্রকাশ, ক্রন্দন

  • লক্ষ্মীর প্রতিমা: সৌন্দর্য, শ্রী, মঙ্গল ও ঐশ্বর্যের প্রতীক নারী

  • পাছে পাছে: সঙ্গে সঙ্গে, পিছনে পিছনে

মন্তব্য করুন