ভগ্নহৃদয় সপ্তদশ সর্গ bhagno hriday soptodos sorgo[ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভগ্নহৃদয় সপ্তদশ সর্গ bhagno hriday soptodos sorgo[ কবিতা ]

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কাব্যগ্রন্থ : ভগ্নহৃদয়

কবিতার শিরোনামঃ ভগ্নহৃদয় সপ্তদশ সর্গ

ভগ্নহৃদয় সপ্তদশ সর্গ bhagno hriday soptodos sorgo[ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভগ্নহৃদয় সপ্তদশ সর্গ bhagno hriday soptodos sorgo[ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মুরলা।  প্রান্তরে
যার কেহ নাই তার সব আছে,
সমস্ত জগৎ মুক্ত তার কাছে–
তারি তরে উঠে রবি শশী তারা,
      তারি তরে ফুটে কুসুম গাছে।
একটি যাহার নাইক আলয়
      সমস্ত জগৎ তাহারি ঘর,
একটি যাহার নাই সখা সখী
      কেহই তাহার নহেক পর!
আর কি সে চায়? রয়েছে যখন
      আপনি সে আপনার,
      কিসের ভাবনা তার?
কিন্তু যে জনের প্রাণের মনের
      একজন শুধু আছে,
রবি শশী তার সেই এক জন,
সেই তার প্রাণ, সেই তার মন,
      সেই সে জগৎ তাহার কাছে–
      জগৎ সেজন-ময়,
      আর কহে কেহ নয়!
পৃথীবীর লোক সেই এক জন–
      যদি সে হারায় তাকে
আর তার তরে রবি নাহি উঠে,
আর তার তরে ফুল নাহি ফুটে,
      কিছু তার নাহি থাকে!
বহিছে তটিনী, বহিছে তটিনী,
      তটিনী বহিছে না–
গাহিছে বিহগ, গাহিছে বিহগ,
      বিহগ গাহিছে না।
ভগ্নহৃদয় সপ্তদশ সর্গ bhagno hriday soptodos sorgo[ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সমস্ত জগৎ গেছে ধ্বংস হয়ে,
      নিভেছে তপন শশী–
সারা জগতের শ্মশানমাঝারে
      সে শুধু একেলা বসি!
কি একটি বালু-কণার উপরে
      তাহার সমস্ত জগৎ ছিল!
নিশ্বাস লাগিতে খসিল বালুকা,
      নিমেষে জগৎ মিশায়ে গেল!
হা রে হা অবাধ, জীবন লইয়া
      হেন ছেলেখেলা করিতে আছে।
ক্ষণস্থায়ী ওই তিলেকের ‘পরে
      সমস্ত জগৎ গড়িতে আছে!
মুহূর্ত্তকালের ক্ষীণমুষ্টিমাঝে
      তোর চিরকাল রাখিতে আছে!
রাখ্‌ রে ছড়ায়ে হৃদয়টি তোর
      সমস্তজগৎময়!
জগৎসাগরে বিম্ব যত আছে
      কেহই কাহারো নয়!
সে বিম্বের ‘পরে রাখিস্‌ নে তুই
      কোন আশা মন মোর!
সহসা দেখিবি বিম্বটির সাথে
      ভেঙ্গেছে সর্ব্বস্ব তোর।
ওরে মন, তোর অগাধ বাসনা
      সমস্ত জগৎ করুক গ্রাস!
সমস্ত জগৎ ঘেরিয়া রাখ্‌ রে,
      হৃদয় রে, তোর সুখের আশ।
সন্ন্যাসিনী তুই, কাঁদিস রে কেন?
      কেন রে ফেলিস দুখের শ্বাস?
গেছে ভেঙ্গে তোর একটি জগৎ,
      আরেক জগতে করিবি বাস।
সে জগৎ তোর তরে হয় নি রে,
      অদৃষ্টের ভুলে গেছিলি সেথা–
সেথায় আলয় খুঁজিয়া খুঁজিয়া
      কতই না তুই পাইলি ব্যথা!
ভগ্নহৃদয় সপ্তদশ সর্গ bhagno hriday soptodos sorgo[ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোর নিজদেশে এসেছিস এবে,
      কেহ নাই তোরে কহিতে কথা–
আদর কাহারো পাস নে কখনো,
      আদর কাহারো চাস নে হেথা।
এখনো ত এই নূতন জীবনে
      সুখ দুখ কিছু ঘটে নি তোর–
দিবসের পরে আসিছে দিবস,
      রজনীর পরে রজনী ভোর!
দিবস রজনী নীরব চরণে
      যেমন যেতেছে তেমনি যাক–
কাঁদিস নে তুই, হাসিস নে তুই
      যেমন আছিস তেমনি থাক্‌!
সে জগতে ছিল কাহারো বা দুখ
      কারো বা সুখের রাশি,
এ জগতে যত নিবাসী জনের
      নাহিক রোদন হাসি–
সকলেই চায় সকলের মুখে,
      শুধায় না কেহ কথা–
নাইক আলয়, চলেছে সকলে
      মন যার যায় যেথা!
ভগ্নহৃদয় সপ্তদশ সর্গ bhagno hriday soptodos sorgo[ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Amar Rabindranath Logo
Amar Rabindranath Logo

আরও পড়ুনঃ

স্বপ্নরুদ্ধ swopnoruddho [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

মন্তব্য করুন