অপযশ (Opojosh) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু কাব্যগ্রন্থের একটি মধুর ও শিক্ষণীয় কবিতা, যা ১৯০৩ সালে প্রকাশিত হয়। এই কবিতায় কবি শিশুদের নির্দোষ দুষ্টুমি, ভুল বোঝাবুঝি এবং সমাজের কঠোর সমালোচনার মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে শেখানোর চেষ্টা করেছেন। হালকা রসিকতা ও জীবন্ত চিত্রকল্পের মাধ্যমে কবি বার্তা দিয়েছেন—অন্যের কথায় মন খারাপ না করে নিজের স্বভাবের সৌন্দর্য ধরে রাখাই শ্রেয়।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: অপযশ
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশু-কিশোর, নৈতিক শিক্ষা, জীবনদর্শন
অপযশ – কবিতার পাঠ
বাছা রে, তোর চক্ষে কেন জল।
কে তোরে যে কী বলেছে
আমায় খুলে বল্।
লিখতে গিয়ে হাতে মুখে
মেখেছ সব কালি,
নোংরা ব’লে তাই দিয়েছে গালি?
ছি ছি, উচিত এ কি।
পূর্ণশশী মাখে মসী —
নোংরা বলুক দেখি।
বাছা রে, তোর সবাই ধরে দোষ।
আমি দেখি সকল-তাতে
এদের অসন্তোষ।
খেলতে গিয়ে কাপড়খানা
ছিঁড়ে খুঁড়ে এলে
তাই কি বলে লক্ষ্মীছাড়া ছেলে।
ছি ছি, কেমন ধারা।
ছেঁড়া মেঘে প্রভাত হাসে,
সে কি লক্ষ্মীছাড়া।
কান দিয়ো না তোমায় কে কী বলে।
তোমার নামে অপবাদ যে
ক্রমেই বেড়ে চলে।
মিষ্টি তুমি ভালোবাস
তাই কি ঘরে পরে
লোভী বলে তোমার নিন্দে করে!
ছি ছি, হবে কী।
তোমায় যারা ভালোবাসে
তারা তবে কী।
ভাবার্থ
এই কবিতায় কবি স্নেহভরে এক শিশুকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, যে অন্যদের কথায় কষ্ট পেয়েছে। শিশুর দুষ্টুমি, এলোমেলো অবস্থা বা পছন্দ-অপছন্দের কারণে যে সমালোচনা বা নিন্দা হয়, সেটিকে কবি স্বাভাবিক বলে মনে করছেন না। বরং তিনি বোঝাচ্ছেন—যেমন পূর্ণ চাঁদে কালো দাগ থাকলেও তার সৌন্দর্য কমে না, তেমনই ছোটখাটো ভুল বা দুর্বলতা মানুষের আসল সত্তাকে ছোট করে না।
শব্দার্থ
অপযশ: খারাপ নাম, বদনাম
পূর্ণশশী: পূর্ণ চাঁদ
মসী: কালি
লক্ষ্মীছাড়া: অসভ্য বা অনিয়ন্ত্রিত শিশু
অপবাদ: মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত অভিযোগ