অস্তসখী (Ostosokhi) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের একটি অনন্য প্রতীকধর্মী কবিতা। এখানে অস্তগামী চাঁদ, শুকতারা এবং প্রভাতের আভা মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট নির্মিত হয়েছে, যা বিদায় ও আগমনের এক মায়াময় মুহূর্তকে প্রতিফলিত করে। কবি প্রকৃতিকে মানবিক আবেগে রূপান্তরিত করে জীবনচক্র, সম্পর্ক ও নতুন আশার দিকটি তুলে ধরেছেন।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: অস্তসখী
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: প্রকৃতিচিত্র, রূপক, বিদায় ও নতুন সূচনা
অস্তসখী – কবিতার পাঠ
রজনী একাদশী
পোহায় ধীরে ধীরে,
রঙিন মেঘমালা
উষারে বাঁধে ঘিরে।
আকাশে ক্ষীণ শশী
আড়ালে যেতে চায়,
দাঁড়ায়ে মাঝখানে
কিনারা নাহি পায়।
এ-হেন কালে যেন
মায়ের পানে মেয়ে
রয়েছে শুকতারা
চাঁদের মুখে চেয়ে।
কে তুমি মরি মরি
একটুখানি প্রাণ।
এনেছ কী না জানি
করিতে ওরে দান।
মহিমা যত ছিল
উদয়-বেলাকার
যতেক সুখসাথি
এখনি যাবে যার,
পুরানো সব গেল —
নূতন তুমি একা
বিদায়-কালে তারে
হাসিয়া দিলে দেখা।
ও চাঁদ যামিনীর
হাসির অবশেষ,
ও শুধু অতীতের
সুখের স্মৃতিলেশ।
তারারা দ্রুতপদে
কোথায় গেছে সরে —
পারে নি সাথে যেতে,
পিছিয়ে আছে পড়ে।
তাদেরই পানে ও যে
নয়ন ছিল মেলি,
তাদেরই পথে ও যে
চরণ ছিল ফেলি,
এমন সময়ে কে
ডাকিলে পিছু-পানে
একটি আলোকেরই
একটু মৃদু গানে।
গভীর রজনীর
রিক্ত ভিখারিকে
ভোরের বেলাকার
কী লিপি দিলে লিখে।
সোনার-আভা-মাখা
কী নব আশাখানি
শিশির-জলে ধুয়ে
তাহারে দিলে আনি।
অস্ত-উদয়ের
মাঝেতে তুমি এসে
প্রাচীন নবীনেরে
টানিছ ভালোবেসে —
বধূ ও বর-রূপে
করিলে এক-হিয়া
করুণ কিরণের
গ্রন্থি বাঁধি দিয়া।
ভাবার্থ
এই কবিতায় চাঁদের অস্তযাত্রা ও ভোরের সূর্যের আগমনকে কবি এক সম্পর্কের প্রতীক করেছেন। পুরনো দিনের সঙ্গীরা বিদায় নিলেও নতুন দিনের আশাবাদী আলো চাঁদকে শেষ মুহূর্তে বিদায় জানায়। এটি জীবনের এক প্রাকৃতিক সত্য—বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন শুরুর উপস্থিতি। চাঁদ ও প্রভাতের মিলনে অতীতের স্মৃতি ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা একইসাথে ধরা দেয়।
শব্দার্থ
শশী: চাঁদ
শুকতারা: প্রভাতের তারা
উষা: ভোর বা প্রভাত
বেলাকা: ভোর বা সন্ধ্যার আকাশের আভা
আভা: আলো বা দীপ্তি
গ্রন্থি: গিঁট বা বন্ধন