রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সমুদ্র কবিতাটি তাঁর “পূরবী” কাব্যগ্রন্থের একটি উল্লেখযোগ্য রচনা। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত “পূরবী” কাব্যগ্রন্থটি কবিগুরুর জীবনদর্শন, প্রকৃতিপ্রীতি ও মানবিক অনুভবের এক গভীর নিদর্শন। এই কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলোর মধ্যে “সমুদ্র” একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে, যেখানে কবি সমুদ্রকে কেবল একটি প্রাকৃতিক রূপেই উপস্থাপন করেননি, বরং তাকে এক বিশাল, অন্তহীন, রহস্যময় ও জীবনের প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করেছেন। কবিতাটিতে গভীর দার্শনিক ভাবনা, আত্মঅন্বেষণ এবং মহাজগতের প্রতি এক বিস্মিত দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। সমুদ্রের বিরাটত্ব ও গভীরতা যেন কবির অন্তরের ভাবনা ও চেতনার প্রতিধ্বনি হয়ে ওঠে। “সমুদ্র” কবিতাটি পাঠকের মধ্যে সৃষ্টি করে এক অতল বোধের অনুভব, যা রবীন্দ্রকাব্যের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একটি দিক
![সমুদ্র কবিতা [ পূরবী কাব্যগ্রন্থ ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Somudro Kobita by Rabindranath Tagore ] 2 সমুদ্র কবিতা [ পূরবী কাব্যগ্রন্থ ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Somudro Kobita by Rabindranath Tagore ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2024/07/রবীন্দ্রনাথ-ঠাকুর-57-1024x591.jpg)
Table of Contents
সমুদ্র কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১
হে সমুদ্র, স্তব্ধচিত্তে শুনেছিনু গর্জন তোমার
রাত্রিবেলা; মনে হল গাঢ় নীল নিঃসীম নিদ্রার
স্বপ্ন ওঠে কেঁদে কেঁদে। নাই, নাই তোমার সান্ত্বনা;
যুগ যুগান্তর ধরি নিরন্তর সৃষ্টির যন্ত্রণা
তোমার রহস্য-গর্ভে ছিন্ন করি কৃষ্ণ আবরণ
প্রকাশ সন্ধান করে। কত মহাদ্বীপ মহাবন
এ তরল রঙ্গশালে রূপে প্রাণে কত নৃত্যে গানে
দেখা দিয়ে কিছুকাল, ডুবে গেছে নেপথ্যের পানে
নিঃশব্দ গভীরে। হারানো সে চিহ্নহারা যুগগুলি
মূর্তিহীন ব্যর্থতায় নিত্য অন্ধ আন্দোলন তুলি
হানিছে তরঙ্গ তব। সব রূপ সব নৃত্য তার
ফেনিল তোমার নীলে বিলীন দুলিছে একাকার।
স্থলে তুমি নানা গান উৎক্ষেপে করেছ আবর্জন,
জলে তব এক গান — অব্যক্তের অস্থির গর্জন।
২
হে সমুদ্র, একা আমি মধ্যরাতে নিদ্রাহীন চোখে
কল্লোলমরুর মধ্যে দাঁড়াইয়া স্তব্ধ ঊর্ধ্বলোকে
চাহিলাম; শুনিলাম নক্ষত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাজে
আকাশের বিপুল ক্রন্দন; দেখিলাম শূন্যমাঝে
আঁধারের আলোকব্যগ্রতা। কত শত মন্বন্তরে
কত জ্যোতির্লোক গূঢ় বহ্নিময় বেদনার ভরে
অস্ফুটের আচ্ছাদন দীর্ণ করি তীক্ষ্ন রশ্মিঘাতে
কালের বক্ষের মাঝে পেল স্থান প্রোজ্বল প্রভাতে
প্রকাশ-উৎসবদিনে। যুগসন্ধ্যা কবে এল তার,
ডুবে গেল অলক্ষ্যে অতলে। রূপনিঃস্ব হাহাকার
অদৃশ্য বুভুক্ষু ভিক্ষু ফিরিছে বিশ্বের তীরে তীরে,
ধুলায় ধুলায় তার আঘাত লাগিছে ফিরে ফিরে।
ছিল যা প্রদীপ্তরূপে নানা ছন্দে বিচিত্র চঞ্চল
আজ অন্ধ তরঙ্গের কম্পনে হানিছে শূন্যতল।
৩
হে সমুদ্র, চাহিলাম আপন গহন চিত্তপানে;
কোথায় সঞ্চয় তার, অন্ত তার কোথায় কে জানে।
ওই শোনো সংখ্যাহীন সংজ্ঞাহীন অজানা ক্রন্দন
অমূর্ত আঁধারে ফিরে, অকারণে জাগায় স্পন্দন
বক্ষতলে। এক কালে ছিল রূপ, ছিল বুঝি ভাষা;
বিশ্বগীতিনির্ঝরের তীরে তীরে বুঝি কত বাসা
বেঁধেছিল কোন্ জন্মে – দুঃখে সুখে নানা বর্ণে রাঙি
তাহাদের রঙ্গমঞ্চ হঠাৎ পড়িল কবে ভাঙি
অতৃপ্ত আশার ধূলিস্তূপে। আকার হারালো তারা,
আবাস তাদের নাহি। খ্যাতিহারা সেই স্মৃতিহারা
সৃষ্টিছাড়া ব্যর্থ ব্যথা প্রাণের নিভৃত লীলাঘরে
কোণে কোণে ঘোরে শুধু মূর্তি-তরে, আশ্রয়ের তরে।
রাগে অনুরাগে যারা বিচিত্র আছিল কত রূপে,
আজ শূন্য দীর্ঘশ্বাস আঁধারে ফিরিছে চুপে চুপে।
![সমুদ্র কবিতা [ পূরবী কাব্যগ্রন্থ ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Somudro Kobita by Rabindranath Tagore ] 3 আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2023/02/আমার-রবীন্দ্রনাথ-গুগল-নিউজ-google-news-300x225.jpg)
আও দেখুন:
![সমুদ্র কবিতা [ পূরবী কাব্যগ্রন্থ ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Somudro Kobita by Rabindranath Tagore ] 1 সমুদ্র কবিতা [ পূরবী কাব্যগ্রন্থ ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Somudro Kobita by Rabindranath Tagore ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/সমুদ্র-কবিতা.gif)