রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সমুদ্র কবিতাটি তাঁর অমর কাব্যগ্রন্থ কড়ি ও কোমল-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। ১৩০৭ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত এই কাব্যগ্রন্থটি কবির যুবক বয়সের সৃজনশীল উচ্ছ্বাস ও সংগীতময় চেতনার প্রতিফলন। এই গ্রন্থের কবিতাগুলো ভাবগম্ভীরতা ও সৌন্দর্যচেতনার মেলবন্ধনে গঠিত, যেখানে প্রকৃতি, প্রেম, জীবন ও সংগীত এক অপূর্ব ছন্দে ধ্বনিত হয়েছে। সমুদ্র কবিতায় কবি সমুদ্রের বিশালতা, গর্জন, অন্তহীনতা এবং রহস্যময় আকর্ষণকে প্রতীক করে তুলে ধরেছেন মানবমনের অন্তর্গত ভাবনাগুলোর সঙ্গে। এটি কেবল প্রকৃতির একটি চিত্রায়ণ নয়, বরং এক অন্তর্জগতের অনুভব, যা পাঠককে গভীর চিন্তার দিকে আহ্বান জানায়।
সমুদ্র কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কিসের অশান্তি এই মহাপারাবারে,
সতত ছিঁড়িতে চাহে কিসের বন্ধন!
অব্যক্ত অস্ফুট বাণী ব্যক্ত করিবারে
শিশুর মতন সিন্ধু করিছে ক্রন্দন।
যুগ-যুগান্তর ধরি যোজন যোজন
ফুলিয়া ফুলিয়া উঠে উত্তাল উচ্ছ্বাস–
অশান্ত বিপুল প্রাণ করিছে গর্জন,
নীরবে শুনিছে তাই প্রশান্ত আকাশ।
আছাড়ি চূর্ণিতে চাহে সমগ্র হৃদয়
কঠিন পাষাণময় ধরণীর তীরে,
জোয়ারে সাধিতে চায় আপন প্রলয়,
ভাঁটায় মিলাতে চায় আপনার নীরে।
অন্ধ প্রকৃতির হৃদে মৃত্তিকায় বাঁধা
সতত দুলিছে ওই অশ্রুর পাথার,
উন্মুখী বাসনা পায় পদে পদে বাধা,
কাঁদিয়া ভাসাতে চাহে জগৎ-সংসার।
সাগরের কণ্ঠ হতে কেড়ে নিয়ে কথা
সাধ যায় ব্যক্ত করি মানবভাষায়–
শান্ত করে দিই ওই চির ব্যাকুলতা,
সমুদ্রবায়ুর ওই চির হায় হায়।
সাধ যায় মোর গীতে দিবস রজনী
ধ্বনিতে পৃথিবী-ঘেরা সংগীতের ধ্বনি।
আরও দেখুন: