তুমি রবে নীরবে [ Tumi robe nirobe ] গানটি রবীন্দ্রনাথের প্রেম পর্বের ৬২ তম গান। মোট ২৪৮টি গান এই বিষয়শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত। প্রেমমূলক গানে রবীন্দ্র চিন্তা সহজ সস্তা পথে চলা কোন অভিসন্দর্ভ নয়, এ যেন দার্শনিক ভবধারায় পুষ্ট এক ক্লাসিক ও অবিনাশী উচ্চারণ।
![তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ] 2 তুমি রবে নীরবে [ Tumi robe nirobe lyrics ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-40-2.jpeg)
রাগ: বেহাগ | তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৮ কার্তিক, ১৩০২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৮৯৫
রচনাস্থান: জোড়াসাঁকো
![তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ] 3 AmarRabindranath.com Logo 252x68 px White তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/08/AmarRabindranath.com-Logo-252x68-px-White.png)
তুমি রবে নীরবে [ Tumi robe nirobe lyrics ]
তুমি রবে নীরবে
হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমা নিশীথিনী সম
তুমি রবে নীরবে
হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে
মম জীবন যৌবন
মম অখিল ভুবন
তুমি ভরিবে গৌরবে
নিশীথিনী সম
তুমি রবে নীরবে
হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে
জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি
তব অঞ্চল ছায়া মোরে রহিবে ঢাকি
মম দুঃখ বেদন
মম সফল স্বপন
মম দুঃখ বেদন
মম সফল স্বপন
তুমি ভরিবে সৌরভে
নিশীথিনী সম
তুমি রবে নীরবে
হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমা নিশীথিনী সম
তুমি রবে নীরবে
হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে …
![তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ] 4 AmarRabindranath.com Logo 252x68 px Dark তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/08/AmarRabindranath.com-Logo-252x68-px-Dark.png)
রবীন্দ্রনাথের গান:
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা ১৯শ’ ১৫টি গানকে প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করলে যে চিত্রটি এসে উপস্থিত হয় তাকে সাজালে আমরা বিভিন্নমুখী গান ও সুর মূর্ছনার সন্ধান পাই। এগুলোকে পূজা, প্রেম, প্রকৃতি, দেশাত্তবোধ, অনুষ্ঠান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে বিভাজিত করা যায়।
এখানে, পূজা পর্বের গান ৬২৯টি, স্বদেশ পর্বের ৪৬টি, প্রেম পর্বের ২৪৮টি, প্রকৃতি নিয়ে ২৮৩টি, বিচিত্র বিষয়ে ১৪০টি, অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ২১টি, ভালুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী বিশ্লেষণে কমবেশি ২০টি, নাট্যগীত ১৩২টি, জাতীয় সঙ্গীতরূপী ১৬টি, পূজা ও প্রার্থনা বিষয়ক ৮৩টি, প্রেম ও প্রকৃতি বিষয়ক ১০১টি গান পাওয়া যায়।
‘একদিকে পূজা অপরদিকে প্রেম’—এমন গানের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কালমৃগয়া, বাল্মীকিপ্রতিভা, মায়ার খেলা, চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, শ্যামা এবং পরিশোধ প্রভৃতি গীতিনাট্যে আমরা দেখি গানে গানেই বক্তব্য ও তার বিন্যাস দিয়ে কথা ও সুরলহরি উপস্থাপিত হয়েছে।
পূজা পর্বের গানগুলোর কথা ও সুরে ঈশ্বর প্রেম, শ্রদ্ধা বা স্মরণ বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে গানে গানে তিনি বন্ধন কাটার মনোজাগতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। সুরের গুরু বা সৃষ্টিকর্তার কাছে সুর বা পরম পুরুষের তর্পণের জন্য জ্ঞানকে প্রার্থনা করেছেন। মুক্তি খুঁজেছেন ঈশ্বর সৃষ্ট আলো, ধূলি ও ঘাসে। মনের ভেতর শুনেছেন তাঁর চরণধ্বনি যিনি দীনবন্ধু, চিরবন্ধু ও চিরশান্তির আশ্রয়স্থল। সব কাজ শেষ হলে তিনি নীরবে অথচ হাসি মুখেই ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাবেন এ প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন আনন্দচিত্তে।
পূজা অংশে ভক্তি-শ্রদ্ধাপূর্ণ পঙ্ক্তিগুলোকে তিনি সব সুরের অধিকারী মহান স্রষ্টাকে বিশ্বলোকের রাগীনিরূপে অর্ঘ্য দিয়েছেন। এখানে ৬২৯টি গান স্বতন্ত্র একুশটি রকমে যথা বন্ধ, প্রার্থনা, বিরহ, দুঃখ, আত্মবোধন প্রভৃতি নামেও বিভাজিত করা যায়। পরিণয়ের গানগুলোর মধ্যেও পূজারই প্রাধান্য দেখা যায়, যদিও সেখানে প্রেমও অচ্ছেদ্যরূপে বিদ্যমান। আর প্রকৃত অর্থে সঙ্গীতের নাম দেয়াও কঠিন। একদিকে যা পূজা অন্যদিকে সেটাই প্রেম। এরা এক বৃন্তে দুটি ফুল, সহযোগী ও আলিঙ্গনাবদ্ধ এবং সহমর্মীও বটে।
![তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ] 3 AmarRabindranath.com Logo 252x68 px White তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/08/AmarRabindranath.com-Logo-252x68-px-White.png)
স্বদেশ অংশে তাঁর গানগুলো দেশপ্রেম-মূলক। সোনার বাংলাকে ভালবাসা এবং বাংলায় জন্ম নিয়ে তাঁর জন্ম যে সার্থক হয়েছে সেভাবেই উচ্চারণ করেছেন। আবার দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও গণজাগরণের জন্য যেমন গানকে এনেছেন, তেমনি বলেছেন অত্যাচারীর বাঁধন যত শক্ত হবে ততো দ্রুতই সে বাঁধন ছিঁড়বে, দেশ মুক্ত হবে। দেশপ্রেমের সাথে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করার জন্য এভাবে গানের কথায় সবার চিন্তার সাথে নিজেকে সংযুক্ত করেছেন। সবার মধ্যে নিজের মুক্ত ও মুক্তি চিন্তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
নিজেকে তাঁদের সাথে এক সারিতে দাঁড় করিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন এবং সাহস জুগিয়েছেন। জনগণের মনো-দৈহিক চিন্তা ও চেতনার সাথে একাত্ম হয়েছেন। অন্যকথায় ব্রিটিশ শাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিজের অভিমত প্রকাশ করে মুক্তচিন্তার সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এখানেই তাঁর সত্য পথানুসন্ধানের চিন্তা ও চেতনার মূর্ত প্রকাশ হয়েছে। অবশ্য ভিন্ন চিন্তার সুরেও কখনো নিজেকে বেঁধেছেন তিনি। প্রেমমূলক গানে রবীন্দ্র চিন্তা সহজ সস্তা পথে চলা কোন অভিসন্দর্ভ নয়, এ যেন দার্শনিক ভবধারায় পুষ্ট এক ক্লাসিক ও অবিনাশী উচ্চারণ।
![তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ] 4 AmarRabindranath.com Logo 252x68 px Dark তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/08/AmarRabindranath.com-Logo-252x68-px-Dark.png)
স্বদেশ অংশে তাঁর গানগুলো দেশপ্রেম-মূলক। সোনার বাংলাকে ভালবাসা এবং বাংলায় জন্ম নিয়ে তাঁর জন্ম যে সার্থক হয়েছে সেভাবেই উচ্চারণ করেছেন। আবার দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও গণজাগরণের জন্য যেমন গানকে এনেছেন, তেমনি বলেছেন অত্যাচারীর বাঁধন যত শক্ত হবে ততো দ্রুতই সে বাঁধন ছিঁড়বে, দেশ মুক্ত হবে। দেশপ্রেমের সাথে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করার জন্য এভাবে গানের কথায় সবার চিন্তার সাথে নিজেকে সংযুক্ত করেছেন। সবার মধ্যে নিজের মুক্ত ও মুক্তি চিন্তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজেকে তাঁদের সাথে এক সারিতে দাঁড় করিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন এবং সাহস জুগিয়েছেন।
জনগণের মনো-দৈহিক চিন্তা ও চেতনার সাথে একাত্ম হয়েছেন। অন্যকথায় ব্রিটিশ শাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিজের অভিমত প্রকাশ করে মুক্তচিন্তার সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এখানেই তাঁর সত্য পথানুসন্ধানের চিন্তা ও চেতনার মূর্ত প্রকাশ হয়েছে। অবশ্য ভিন্ন চিন্তার সুরেও কখনো নিজেকে বেঁধেছেন তিনি। প্রেমমূলক গানে রবীন্দ্র চিন্তা সহজ সস্তা পথে চলা কোন অভিসন্দর্ভ নয়, এ যেন দার্শনিক ভবধারায় পুষ্ট এক ক্লাসিক ও অবিনাশী উচ্চারণ।
প্রকৃতি পর্বের আকাশ ভরা, আজ দখিন দুয়ার খোলা, আমার মল্লিকা বনে, একটুকু ছোঁয়া লাগে, এ সব গানই কথার যাদুতে অপূর্ব অথচ চিরকালীন মানুষের কাছে চিরসত্য ও চিরচিন্তিত এক অভিজ্ঞান। তারপরও সত্যটি হলো রবীন্দ্রনাথের সব গান গাওয়া হয়নি সেভাবে। অনেক গান এমন রসোত্তীর্ণ হয়েছে, মনকাননের এমন উচ্চস্তরে বসেছে যে, হাজারবার শুনলেও সাধ মেটে না, মন ভরে না।
বারবার বেশি বেশি করে শুনতে ইচ্ছা করে। তাঁর অন্যবিধ গানগুলোর আনুপূর্বিক উদাহরণ ও বর্ণনা এখানে উপস্থাপন করছি না কারণ ইতোমধ্যেই লেখার কলেবর বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব গানেই গানে-গানে, সুরে-সুরে, রবীন্দ্রনাথ খুঁজেছেন জীবন, জগৎ ও স্রষ্টাকে আর সুরধ্যানে পৌঁছে যেতে চেয়েছেন ঈশ্বরের কাছে। গানের ভেতরে তিনি পূর্ণতার আর্শীবাণী শুনেছেন। এ থেকে মনের ভেতর সৃষ্টি করেছেন ধ্যানমগ্ন এক রূপালী জগৎ, যে জগতে জীবন চিরকালই কৌমুদীস্নাত হয় আর বসন্ত হয় অনিঃশেষ।
![তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ] 3 AmarRabindranath.com Logo 252x68 px White তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/08/AmarRabindranath.com-Logo-252x68-px-White.png)
রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য ভুবনের উজ্জ্বলতম এক নক্ষত্র। এখানে তিনি সূর্যের মতোই প্রদীপ্ত ও তেজস্বী। তাঁর হিমাদ্রিসম কাব্য সাধনার একটা স্বর্ণখচিত দিক হলো রবীন্দ্রসঙ্গীত। এখানে তিনি বিশাল এক উচ্চতার অধিকারী, এক বিশাল প্রতিভাধর ও স্রষ্টা, যা আমাদের কাছে অনন্ত আকাশের মতোই অসীমতার প্রতীক। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা ১৯শ’ ১৫টি হলেও এ সব গানের ভাব, ভাষা, সৃজনীসুধা, কথা, ব্যঞ্জনা, সুর, ছেদহীন ধারাবাহিক বর্ণনা ও বিষয়ের বিচিত্রতা সর্বমুখী ও সর্বহৃদয়স্পর্শী।
গানগুলো নানাবিধ অনুধ্যানে ঋদ্ধ এবং জীবন ঘনিষ্ঠ। তাঁর গান মানব মন ও মনুষ্য সংসারের নানা রূপময়তায় পরিপূর্ণ। ধ্যানমগ্নতায় তা উত্তুঙ্গ হিমালয় হতে অন্তরীক্ষ পর্যন্ত ব্যাপ্ত। আর কথা সুর ও বোধ বিন্যাসে তা অতলান্ত সমুদ্র গভীর। গানের নক্ষত্রখচিত আকাশ সৃষ্টি করেছেন কাল উৎসারী, কালবিজয়ী, স্বকীয় এক আবেগী আকর্ষণ ও বৈচিত্র বিন্যাসী রূপমাধুর্যে এবং তিনি তা করেছেন অন্তরের গভীরতম ও বোধনসম্পৃক্ত এক বিরামহীন সৃষ্টিশীলতাকে অঞ্জলি দিয়ে।
এ মানুষ, এ প্রকৃতি, সৃষ্টিকর্তা, পরিবেশ, জীবজগৎ, ভালমন্দ, ন্যায়-অন্যায় এবং শোভন-সুন্দরতাকে তিনি নিজের মতো করে মুক্তবুদ্ধি, যুক্তি, স্বাধীন ও স্বকীয় মননশীলতার সুকুমার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বুঝেছেন। তাঁর নিজস্বতা, আপনতা, ভালবাসা ও বিশ্লেষণের অগাধ ক্ষমতা সেখানেই সাবলীলতায় বিকশিত হয়েছে। গানকে জীবন ও প্রাণের সারাৎসার গণ্য করে এবং ঈশ্বরপ্রেম, অঞ্জলি ও আরাধনাকে মাধ্যম করে সুরের ভেলায় চড়ে তিনি ছুটেছেন সম্মুখে । তিনি চলে গেছেন এভাবেই দৃষ্টির বাহিরে প্রেমের উজ্জয়িনীপুরে; সোনার নূপুরে যেখানে বেজেছে অনুধ্যানী সুর, যা জীবন ও জগৎকে অফুরন্ত এক শান্তি সুখে করেছে ভরপুর।
অন্ধকার ও পার্থক্যের গোলকধাঁধাকে তিনি ভেদ করতে চেয়েছেন সুরের মাধবী মায়ায়, যেখানে গানকে সকল সাধনার সুনিপুণ কাণ্ডারী, চিরন্তনীকে প্রকাশের মাধ্যম, চিন্তা ও বক্তব্যের রাজ্যে বিজয়ের প্রতীকে পরিণত করেছেন। প্রেরণা ও বন্ধনের মাধ্যম হয়ে এসেছে চিরমানবিক তপস্যার এ ধন। মুক্তির সুখসুধায় আরতী হয়ে এসেছে এ গান, যা পৃথিবী, মানুষ, প্রকৃতি ও ঈশ্বরের মাঝে হয়েছে সেতু বন্ধক। জন্ম-মৃত্যু যেন সেখানে এক মামুলী বিষয়, এক খেয়ালী বাতাস। সুরকে সেধে তিনি গানকে বেঁধেছেন আপন ঘনিষ্ঠতায়। গান গেয়েছেন, গেয়ে শুনিয়েছেন, কথা ও সুরের ইন্দ্রজালে মজেছেন, ভেসেছেন, ভাসিয়েছেন, হাসিয়ে কাঁদিয়ে ভাসিয়ে চিরন্তনী এক পথ তৈরি করেছেন। এখানে তিনি এক অনন্য অসামান্য স্রষ্টা—সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভেসে চলা স্বপ্নসারথী থেকে বাস্তবের মহারাজা তিনি।
![তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ] 4 AmarRabindranath.com Logo 252x68 px Dark তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/08/AmarRabindranath.com-Logo-252x68-px-Dark.png)
এখানে রবীন্দ্রনাথ বিরামহীন সাধক, সেবক, পূজারী, প্রেমিক এবং মহান হৃদয়ালোকের বর্তিকা বাহক। এখানে তিনি মুক্ত মনে মুক্তির পথ নির্দেশক এক তপস্যারত পথিক, যেখানে চিত্তবৈকল্য ও চিত্তপ্রসাদ প্রায় অনুপস্থিত। সৌরভের উৎসবেও মেঘ-হাওয়া মিলে মহাজীবনের গানে গানে বিধৃত গীতবিতান তারই মহাসংকলন, যেখানে সব মত পথ এসে হাত ধরাধরি করে মিশেছে বন্ধুত্বের প্রগাঢ় উষ্ণতায়। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যতানের মহান এক সুরে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে তিনি বেঁধেছেন কৌশলী সৃষ্টিশীলতায়। তার গানের ভেলা যদি সাজানো যায় বিষয় বৈচিত্রের বিভাজনী ধারাপাতে, তাহলে আমরা দেখাবো ঘর ও বাহিরের তাপদ্বন্ধ অনবসরী জীবনের পথে হেঁটেও তিনি নানা মনে নানা রং ছড়িয়ে দিয়েছেন।
তবে সুর, বিষয় ও কবিতা পড়ার তৃপ্তিময় আনন্দ মিলিয়ে অন্তরালকে আপন করে নিয়ে তার গানগুলোকে দক্ষতায় পড়তে হবে, তবেই গানের মায়ারাজ্যে প্রবেশের ভাগ্যবান রাজপুত্র রাজকন্যা হওয়া যাবে। এ রস সঞ্চারণই ছিল বিশ্বকবির লক্ষ্য বা ইচ্ছা। উৎসব অনুষ্ঠানের গান, গীতি ও নৃত্যনাট্যও বেঁধেছেন তিনি। সেখানে ব্যক্তিকথা ও ব্যক্তি বিশ্বাস দিয়ে গানকে সাজিয়ে আনন্দ অনুভব করেছেন, করিয়েছেন। নিজের ও অন্যের আনন্দেও গান গেয়েছেন। অন্যেরা তার গান গেয়ে ধন্য হয়েছে। এসব গান সুখ দুঃখের সংসারে এনেছে শান্তিময়তার ছোঁয়া। গানের বন্যা হতো তাঁর মনোভূমে, তাইতো গানের কবি তিনি। প্লাবনসিক্ত মাটিতে তিনি ভালবাসার পেলবতা দিয়ে অহর্ণিশ ফোটাতেন অভাবিত মোহনীয় গানের গোলাপ।
‘বাঁশি আমি বাজাইনি কি পথের ধারে ধারে’—এই কথা তিনি দুঃখ, ব্যাকুলতা, অভিমানন্দ, প্রশ্ন বা প্রশ্নোত্তরে বলতেন। বহু কবিতা গদ্যেও তিনি গানের রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরেছেন আপন তাৎপর্যে। অনেক কবিতাকে গানে রূপান্তর করে, গানের আসরে এনেছেন। তাঁর গান ছিল আলো ও সৌরভের পথযাত্রী এবং চাঁপা, পলাশ, মহুয়া, শেফালী, গন্ধরাজ, টগর, বকুলের গন্ধ মিলিয়ে ভিন্ন এক মধুবন। সেসব দিয়েই তিনি ফাল্গুনপাত্র ভরেছেন, তেমনি বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েই বর্ষার আনন্দ বেদনায় সাজিয়েছেন বর্ষাকে। এ সবই তার স্মারক বার্তা হয়ে আছে।
স্মরণ বিস্মরণের স্রোতে ভাসে সময় ও জীবন। কবি বাস্তবে চিরকাল থাকবেন না বা থাকেনওনি, কিন্তু বাস্তবের অধিক বাস্তবতায় জীবন্ত হয়ে আছেন আপন সৃষ্টির মাঝে অমরত্ব নিয়ে। তাঁর গানের মালার এক একটি গান, এক এক জনের কাছে একেক রকমের। কালস্রোতে কতকিছু ভেসে যায়, যেয়েও অনেক কিছুই থাকে। তাঁর প্রায় সব সৃষ্টিই আছে, আর সেটাই বিদায়পথের শোকে প্রসন্নমনে তাঁর অমরত্বের পথযাত্রী হয়েছে।
গীতাঞ্জলির কবি তিনি— যা, তাঁর জন্য ১৯১৩ সনে এনেছিল নোবেল প্রাইজের স্বীকৃতি ও সম্মান। তাও সে ওই গান বা গীতেরই সংকলন যা সুরের তানে বেঁধে অন্তরের ভাবরূপের প্রকাশক হয়ে বাঁচবে চিরকাল। সেখানে সীমার মাঝে রবীন্দ্রনাথ বাজিয়েছেন অসীমের আপন সুর। শুধু কথা নয়, শ্রোতা যদি সুরও গভীরভাবে বোঝেন তবেই গানটি জীবনের অংশ হবে, শিল্পটি হয়ে উঠবে সুন্দর। কারণ কথা ও সুরের মিলিত রূপই গান। রবীন্দ্রনাথের গানকে বুঝবার, জানবার ও আত্মস্থ করবার জন্য মন, বুদ্ধি, বিবেক, তাড়না, ভাবনা ও আকুতির প্রয়োজন আছে।
যাতনার কষ্ট লাঘবে এবং আনন্দে মনটাকে ভরিয়ে নিয়ে উজ্জীবিত করতে তাঁর গানের দ্যোতনা দিনে দিনে গভীরভাবে মানুষের মনে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দিনের কর্মধারাকে সুসংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে আমরা বারবার রবীন্দ্রনাথের গানের কাছে ফিরে যাব, যেতে হবে। এখানে অশেষের বাণী শান্তির সুর-সুধা নিয়ে সকলের জন্য অপেক্ষা করছে। রবীন্দ্রনাথ মানুষের জন্য আর রবীন্দ্রনাথের গান মানুষের কষ্ট লাঘবের এবং শান্তি লাভের পরম মাধ্যম হয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে, এমনি এক গভীর বিশ্বাসে আমার হৃদয় আনন্দে ভরে থাকে।
আরও পড়ুন:
![তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ] 1 তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম - প্রেম ৬২ [ Tumi robe nirobe lyrics ]](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2021/01/maxresdefault.jpg)