নিরুদ্যম কবিতা [ Nirudyom Kobita ]
কাব্যগ্রন্থ : খেয়া [ ১৯০৬ ]
কবিতার শিরনামঃ নিরুদ্যম
![নিরুদ্যম কবিতা [ Nirudyom Kobita ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 2 নিরুদ্যম nirudyom [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-18-2.jpg)
নিরুদ্যম কবিতা [ Nirudyom Kobita ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তখন আকাশতলে ঢেউ তুলেছে
পাখিরা গান গেয়ে।
তখন পথের দুটি ধারে
ফুল ফুটেছে ভারে ভারে,
মেঘের কোণে রঙ ধরেছে
দেখি নি কেউ চেয়ে।
মোরা আপন মনে ব্যস্ত হয়ে
চলেছিলেম ধেয়ে।
মোরা সুখের বশে গাই নি তো গান,
করি নি কেউ খেলা।
চাই নি ভুলে ডাহিন-বাঁয়ে,
হাটের লাগি যাই নি গাঁয়ে,
হাসি নি কেউ, কই নি কথা,
করি নি কেউ হেলা।
মোরা ততই বেগে চলেছিলেম
যতই বাড়ে বেলা।
শেষে সূর্য যখন মাঝ-আকাশে,
কপোত ডাকে বনে–
তপ্ত হাওয়ায় ঘুরে ঘুরে
শুকনো পাতা বেড়ায় উড়ে,
বটের তলে রাখালশিশু
ঘুমায় অচেতনে,
আমি জলের ধারে শুলেম এসে
শ্যামল তৃণাসনে।
![নিরুদ্যম কবিতা [ Nirudyom Kobita ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 3 বাণীর মুরতি গড়ি banir murati gori [ কবিতা ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-40-5.jpeg)
আমার দলের সবাই আমার পানে
চেয়ে গেল হেসে।
চলে গেল উচ্চশিরে,
চাইল না কেউ পিছু ফিরে,
মিলিয়ে গেল সুদূর ছায়ায়
পথতরুর শেষে।
তারা পেরিয়ে গেল কত যে মাঠ,
কত দূরের দেশে!
ওগো ধন্য তোমরা দুখের যাত্রী,
ধন্য তোমরা সবে।
লাজের ঘায়ে উঠিতে চাই,
মনের মাঝে সাড়া না পাই,
মগ্ন হলেম আনন্দময়
অগাধ অগৌরবে–
পাখির গানে, বাঁশির তানে,
কম্পিত পল্লবে।
আমি মুগ্ধতনু দিলেম মেলে
বসুন্ধরার কোলে।
বাঁশের ছায়া কী কৌতুকে
নাচে আমার চক্ষে মুখে,
আমের মুকূল গন্ধে আমায়
বিধুর ক’রে তোলে–
নয়ন মুদে আসে মৌমাছিদের
গুঞ্জনকল্লোলে।
![নিরুদ্যম কবিতা [ Nirudyom Kobita ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 4 তোমায় চিনি বলে আমি করেছি গরব tomaay chini bole aami karechhie garab [ কবিতা ] - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-16-1.jpg)
সেই রৌদ্রে-ঘেরা সবুজ আরাম
মিলিয়ে এল প্রাণে।
ভুলে গেলেম কিসের তরে
বাহির হলেম পথের ‘পরে,
ঢেলে দিলেম চেতনা মোর
ছায়ায় গন্ধে গানে–
ধীরে ঘুমিয়ে প’লেম অবশ দেহে
কখন কে তা জানে।
শেষে গভীর ঘুমের মধ্য হতে
ফুটল যখন আঁখি,
চেয়ে দেখি, কখন এসে
দাঁড়িয়ে আছ শিয়রদেশে
তোমার হাসি দিয়ে আমার
অচৈতন্য ঢাকি–
ওগো, ভেবেছিলেম আছে আমার
কত-না পথ বাকি।
মোরা ভেবেছিলেম পরানপণে
সজাগ রব সবে–
সন্ধ্যা হবার আগে যদি
পার হতে না পারি নদী,
ভেবেছিলেম তাহা হলেই
সকল ব্যর্থ হবে।
যখন আমি থেমে গেলেম, তুমি
আপনি এলে কবে।
আরও দেখুনঃ
- ননীলাল বাবু যাবে লঙ্কা nanilal babu jabe lonka [ কবিতা ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ভোলানাথ লিখেছিল bholanath likhechhilo [ কবিতা ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- একটা খোঁড়া ঘোড়ার পরে ekta khora ghorar pore [ কবিতা ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- স্ত্রীর বোন চায়ে তার strir bon chaye tar [ কবিতা ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ভুত হয়ে দেখা দিল bhut hoye dekha dilo [ কবিতা ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর