অঞ্চলের বাতাস (Oncholer Batas) কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। কবিতাটি সূক্ষ্ম অনুভূতি, আকস্মিক স্পর্শ এবং অদৃশ্য ভালোবাসার বার্তা বহনকারী বাতাসের প্রতীকী চিত্রায়ণ। কবি এখানে প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্য দিয়ে অন্তর্গত আবেগ ও মানবমনের গভীর রহস্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাষা সুললিত, ধ্বনিমাধুর্যে ভরা, এবং ইন্দ্রিয় জাগ্রতকারী চিত্রকল্পে সমৃদ্ধ।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: কড়ি ও কোমল
কবিতার নাম: অঞ্চলের বাতাস
প্রকাশকাল: ১৯০০ (প্রথম প্রকাশ)
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: প্রকৃতি, প্রেম, অনুভূতি, রোমান্টিক কল্পনা
অঞ্চলের বাতাস – কবিতার পাঠ
পাশ দিয়ে গেল চলি চকিতের প্রায়,
অঞ্চলের প্রান্তখানি ঠেকে গেল গায়,
শুধু দেখা গেল তার আধখানি পাশ–
শিহরি পরশি গেল অঞ্চলের বায়।
অজানা হৃদয়-বনে উঠেছে উচ্ছ্বাস,
অঞ্চলে বহিয়া এল দক্ষিণ বাতাস,
সেথা যে বেজেছে বাঁশি তাই শুনা যায়,
সেথায় উঠিছে কেঁদে ফুলের সুবাস।
কার প্রাণখানি হতে করি হায় হায়
বাতাসে উড়িয়া এল পরশ-আভাস।
ওগো কার তনুখানি হয়েছে উদাস।
ওগো কে জানাতে চাহে মরম বারতা।
দিয়ে গেল সর্বাঙ্গের আকুল নিশ্বাস,
বলে গেল সর্বাঙ্গের কানে কানে কথা॥
ভাবার্থ
এই কবিতায় কবি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত অথচ মধুর মুহূর্তের কথা বলেছেন—যেখানে কারও শাড়ির আঁচল বাতাসে উড়ে এসে কবির গায়ে লাগে। এই স্পর্শ কবির মনে ভালোবাসা, কৌতূহল এবং রহস্যময় অনুভূতির জন্ম দেয়। দক্ষিণ বাতাস এখানে ভালোবাসার বার্তাবাহক, যা প্রিয়জনের মনের কথা, স্নেহ এবং আকুলতা বহন করে আনে। এটি শুধু শারীরিক স্পর্শ নয়, বরং অন্তর্লোকের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার প্রতীক।
শব্দার্থ
অঞ্চল: শাড়ির শেষ প্রান্ত
দক্ষিণ বাতাস: কোমল, মৃদু ও উষ্ণ হাওয়া
পরশ-আভাস: স্পর্শের ইঙ্গিত
তনুখানি: কোমল দেহ
মরম বারতা: হৃদয়ের গভীর কথা বা অনুভূতি